মুক্তমত ডেস্কঃ আবার ফিরে আসি আমাদের টেক্সটাইল ও বস্ত্র খাতে। কেন নতুন উদ্যোক্তাদের দেখা নেই? কেন এঁরা নতুন শিল্প স্থাপনে উৎসাহী হচ্ছেন না?
প্রথমত: বড় উদ্যোক্তরা ছোটদের ডি-মার্কেটিং করছেন। বড় মাছ, পুকুরের সব ছোটমাছকে খেয়ে ফেলছে। দ্বিতীয়ত: ব্যাংক নতুন উদ্যোক্তাদের আগের মতো সহায়তা করছে না। ব্যাংক নিরাপদ বিনিয়োগে বড় ঋণ-খেলাপি প্রতিষ্ঠানকে আবার নতুন করে ঋণ দিচ্ছে। আর আমাদের অসংখ্য মেধাবী বিশ্ববিদ্যালয় স্নাতকেরা ঠিক বুঝে উঠতে পারছেন না , তাঁদের চাকরি বাজার ও উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন আদৌ সম্ভব কীনা, হলেও সেটা কীভাবে! তৃতীয়ত: (এটি আমার ব্যক্তিগত মতও বটে) – ব্রিটিশ কেরানি-নির্ভর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা আমাদের অগুনতি কেরানী তৈরি করছে। শত শত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ে আমাদের বেশি দরকার – হাজার হাজার কারিগরি শিক্ষা নির্ভর শিক্ষালয়। যেখানে, একজন তরুণকে উদ্যোক্তা হতে উৎসাহ দেওয়া হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রী, আমাদেরকে মানসিক প্রতিবন্ধী করে ফেলছে। একটা চেয়ার ও টেবিলের বসার সুযোগের জন্য আমাদের সকল সম্ভাবনা জলাঞ্জলি দিতে প্রস্তুত ।
বাংলাদেশ সরকারের ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কিছু মাস্টার প্ল্যান হয়তো আছে। আমি জানি না। নানা ধরনের ফান্ড থাকে, এসএমই (Small Medium Entrepreneur) ঋণ থাকে। সেটা কতখানি সঠিক জায়গায় পৌঁছায়, সে ব্যাপারে আমাদের সন্দেহ অমূলক নয় এবং প্রতিবছরে ওই ফান্ডের যথোপযুক্ত ব্যবহার হয় কিনা, সেটার কোন তথ্য কারো জানা নেই।
কিছুদিন আগে, বিশাল শিল্পকারখানার মালিক এক বড়ভাইয়ের সঙ্গে কথা হচ্ছিল। তিনি নিজেও চাইতেন, ছোট ছোট স্ক্রিন প্রিন্টিং কারখানা, লেবেল, পলি, টুইল টেপ, বাটন, কার্টন ফ্যাক্টরি ফ্যাক্টরি চালু থাক। কিছু লোকজন উদ্যোক্তা হোক। মুশকিল হচ্ছে, তাঁর অভিজ্ঞতা এই ব্যাপারে খুবই তিক্ত! তিনি হয়তো ভালো মানের সুতা দিয়েছেন তাঁর টুইল টেপ করে দেওয়ার জন্য। কিন্তু, ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা অতি লোভে, মাঝপথেই গাড়ীসহ সেই ভালো মানের সুতা বিক্রি করে দিয়েছেন। পরে, দুনিয়ার উচ্ছিষ্ট খোলা বাজারের সুতা কিনে তাঁর টুইল টেপ বানিয়ে দিয়েছেন। ফলশ্রুতিতে ল্যাবরেটরির পরীক্ষায় গুণগত মানে তাঁর গার্মেন্টস ফেল করেছে।
একই কথা অন্যসব বড় প্রতিষ্ঠানের জন্য, এঁরা যে দামে কাজ ছোটদেরকে দেয়। তাঁরা যদি সঠিক উপাদান ব্যবহার করত তাহলে সমস্যা হওয়ার কথা না। কিন্তু, কিছু অতিলোভী দ্রুত মুনাফা কামী ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের কৃতকর্মের দায় নিতে হচ্ছে অন্য সবাইকে। প্রায়শই ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা ভেজাল ও নিম্নমানের উপাদান ব্যবহার করে বড় প্রতিষ্ঠানকে বিপদে ফেলে দেয়। অনেকবার দেখেছি, সামান্য সুতা, বোতাম, কার্টন, টুইল টেপ, স্ক্রিন প্রিন্ট ফ্যাক্টরির গুণগত মানের সমস্যা অথবা সরবরাহে দেরী হওয়ার গার্মেন্টস মালিককে ডিসকাউন্ট ও এয়ার শিপমেন্টের জরিমানা গুনতে হয়েছে।
দ্রুত বড়লোক হওয়ার ও অতিরিক্ত মুনাফার লোভে পড়ে ধীরে ধীরে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা বড় প্রতিষ্ঠানের ভরসা হারিয়েছেন। এখন বড় প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের কারখানার অভ্যন্তরেই সব ছোট ব্যাক ওয়ার্ড লিংকেজ করে ফেলেছেন। কেননা, তাঁরা তাঁদের মিলিয়ন ডলারের শিপমেন্ট সামান্য কয়েক পয়সার অ্যাকসেসরিজের জন্য হুমকির মুখে ফেলতে চান না।
এই দুষ্টচক্র থেকে কীভাবে বের হওয়া সম্ভব, সেটা নিয়ে কী ধরণের গবেষণা হওয়া উচিৎ সেটা জানার আকাঙ্ক্ষা নিয়েই শেষ করতে হচ্ছে আলোচনা
লেখক: জাহিদুর রহমান জাহিদ
ডেপুটি কান্ট্রি ম্যানেজার, টেক্স-ইবো ইন্টারন্যাশনাল প্রাঃ লিঃ
অগ্রদৃষ্টি.কম // এমএসআই